যে ১০টি ভুলের কারণে অহংকারী হাসিনার পতন । TechyOctopus

যে ১০টি ভুলের কারণে অহংকারী হাসিনার পতন । TechyOctopus

সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হলো ‘একনায়ক’ হিসেবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন কোনো মানুষ এর যখন পতন আসে তখন সে পদে পদে ভুল করে।  আর তাঁর এই উক্তিটি স্পষ্ঠভাবে প্রমাণ হয়েছে শেখ হাসিনার কর্মকান্ডের মাধ্যমে।ছাত্র ও গণ–আন্দোলনের মুখে তাঁর শাসনের পতনের পেছনে একগুঁয়েমি, অহংকার ও অতি আত্মবিশ্বাস-এসবই অন্যতম কারণ। 

 

ছাত্র আন্দোলন এর শুরু থেকেই শেখ হাসিনা ছাত্রদের  কোটা সংস্কার এর দাবীকে বিন্দু মাত্র গুরুত্ব দেন নি।চাইলেই তিনি আন্দোলন থামানোর লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার এর আশ্বাস দিতে পারতেন।কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন। 

১৪ জুলাই চীন সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি ‘রাজাকার’ শব্দও ব্যবহার করেছিলেন।এটি ছিল তার সবচেয়ে বড় ভুল।এতে তাঁর একগুঁয়েমি ও অহংকারের বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছিল।

 

 এরপর শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন, আন্দোলন আরও জোড়ালো হয়।তার ঐ বক্তব্যের পরেই স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকার রাজপথ।

 

পরের দিন ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের উপর পাশবিক নির্যাতন শুরু করে শেখ হাসিনার নির্দেশে। ছাত্রলীগের এই হামলার পরেই গোটা ছাত্র সমাজ ক্ষেপে উঠে,গোটা বাংলাদেশ এর অগণিত ছাত্র জনতা বৈষম্য ও দুঃশাসন এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে পরে।ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে পরে বিপ্লব।

 

সেই বিপ্লব ধ্বংস করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত পুলিশকে ছাত্রদের উপর গুলি ছোড়বার নির্দেশ দেয়।স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ইশারায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ঝাপিয়ে পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগ এর নেতারা।নির্বিচারে প্রাণ হারায় শত শত শিক্ষার্থী। 

 

ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন হাসিনা সরকার এর এই পাশবিকতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পরতে শুরু করে ঠিক তখনই অর্থাৎ ১৮ জুলাই  তিনি সারাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়।ইন্টারনেট বন্ধের ফলে সারাদেশের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি প্রবাসিদের মাঝেও ক্ষোভ তৈরি হয়।



এরপর কারফিউ জারি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা,তাছাড়া ছাত্র দেখলেই তুলে নিয়ে যাওয়া ও ফোন চেক করার মত ঘৃণ্য কাজও পরিচালিত হয়েছিল শেখ হাসিনার নির্দেশে।দেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবার পর শেখ হাসিনা মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন পরিদর্শন করে মায়া কান্নার জড়িয়ে পরেন। এ থেকে বোঝা  যায় হাজার হাজার প্রাণের চেয়ে মেট্রোরেল এর মূল্য তার কাছে বেশি।ফলে সেই স্বৈরশাসককে উৎখাত এর দাবী আরও জোরদার হতে শুরু করে।

 

এছাড়া ৬জন সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে আন্দোলন স্থগিত করার মিথ্যা স্টেটমেন্ট নেয় শেখ হাসিনা।সমন্বয়কদের কাছ থেকে মিথ্যা স্টেটমেন্ট আাদায়ের বিষয়টি যখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে তখনই  কিছুটা ঝিমিয়ে পরা আন্দোলন আরও বৃহৎ আকার ধারণ করে।

 

এতকিছুর পরও শেখ হাসিনার সুযোগ ছিল শিক্ষার্থীদের ৯দফা দাবী মেনে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার।তবে তিনি নিজের ইগো ধরে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে নির্দেশ দেন।শেখ হাসিনার নির্দেশে আবারও পুলিশ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে।

 

এতে হিতে বিপরীত হয়ে ৯ দফা দাবী ১ দফাতে পরিণত হয়।ছাত্রদের দাবী হয়ে উঠৈ তখন একটাই,’শেখ হাসিনার পদত্যাগ’।

ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও নেমে পরে রাস্তায়।এমন পরিস্থিতিতে হাসিনা আরও একটি ভুল করে বসে।

 

সারাদেশে আওয়ামী লীগ এর যত অঙ্গ সংগঠন রয়েছে সবাইকে ছাত্র হত্যার নির্দেশ দেন তিনি।যার প্রতিবাদে ছাত্রসমাজও তাদের সর্বশেষ কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণা করে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’।৫ইআগস্টের সেই ঐতিহাসিক লং মার্চের মাধ্যমে পতন হয় শেখ হাসিনার।

 

শুরু হয় বাংলার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়।কোটা আন্দোলন এর শুরুতেই শেখ হাসিনা চাইলেই ছাত্রদের সাথে সমঝোতায় বসে নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারতেন তবে তা না করে তিনি বার বার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যার ফলস্বরূপ তাকে আজ ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *